ফরেক্স ট্রেডিং স্ট্রেটিজি

 -  Jun 13, 2023


ফরেক্স ট্রেডিং স্ট্রেটিজি কিংবা ফরেক্স ট্রেডিং করার বেশকিছু কৌশল রয়েছে। আসলে বেশকিছু না, এতবেশী ট্রেডিং কৌশল পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করে আপনি চাইলে রিয়েল ট্রেডিং শুরু করতে পারেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এই ট্রেডিং কৌশলগুলোর মধ্যে সবকিছুই কি কাজ করে? যদি না করে তাহলে আপনি কোন স্ট্রেটিজিগুলো অনুসরণ করবেন? এই ধরনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলচনা করা হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

মুলত, একজন ট্রেডার, ট্রেড করার জন্য যেই ধরনের বিষয়, মাধ্যম কিংবা চিন্তা করে ট্রেড করার চিন্তা করেন সেটিই হচ্ছে ফরেক্স ট্রেডিং স্ট্রেটিজি। ট্রেডিং স্ট্রেটিজি মুলত এক একজন ট্রেডারের কাছে এক এক রকমের হয়ে থাকে। একই বিষয় আপনি যেইভাবে ট্রেডে ব্যবহার করবেন, সেগুলো আমরা ব্যবহার করতে গেলে ভিন্ন ভিন্ন হবে। এটাই স্বাভাবিক।

সুতরাং, আজকের আলোচ্য স্ট্রেটিজিগুলো ব্যবহার করে যে আপনি আমাদের মতনই প্রফিট করতে পারবেন, সেটি চিন্তা করে খুশী হবার কিছু নেই। তবে চিন্তার কিছুই নেই, এই স্ট্রেটিজিগুলোর ভালো কিংবা মন্দ দিক কিংবা আপনার জন্য কাজ করবে কিনা সেটি পরখ করে নেয়ার একটি মাত্র মাধ্যম আছে। আর সেটি হচ্ছে প্র্যাকটিস ট্রেডিং সেশনে এগুলোকে ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেয়া।

আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি যতগুলো স্ট্রেটিজি শিখবেন সেগুলোর প্রতিটিকে অবশ্যই আলাদা আলাদা করে ডেমো ট্রেডিং এর মাধ্যমে টেস্ট করে নিবেন। এতে করে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, আপনার জন্য এই কৌশলগুলো ঠিক-থাক কাজ করবে কিনা। এর জন্য অনুগ্রহ করে অবশ্যই একটি প্র্যাকটিস ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করে নিবেন।

কোনওভাবেই এই কৌশলগুলোকে সরাসরি রিয়েল ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। প্রথমে প্র্যাকটিস করে নিজের জন্য সঠিক কৌশল নির্ধারণ করুন। এরপর সেটি ব্যবহার করে রিয়েল ট্রেড করা শুরু করুন।

আমরা সাধারণত রিয়েল ট্রেডিং করার জন্য বিশেষ কোনও টুল ব্যবহার করিনা। অনেকেই আছেন, দেখবেন, চার্টের মধ্যে এতবেশী পরিমাণ টেকনিক্যাল টুল ব্যবহার করেন যার ফলে ভালো মতন চার্টই দেখতে পাওয়া যায়না। তবে আমরা যেই পদ্ধতি অবলম্বন করে রিয়েল ট্রেডিং করে থাকি সেগুলোর মধ্যে থেকে প্রফিটেবল কিছু ফরেক্স ট্রেডিং স্ট্রেটিজি নিয়েই আজকে আলোচনা করবো।


নং ১ – স্বর্ণসূত্র

“স্বর্ণসুত্র” কিংবা Golden Rules নামক একটি বিষয় আছে। এটি হচ্ছে মুলত, যার উপর ভিত্তি কিংবা নির্ভর করে ভিন্ন কোনও কিছু তৈরি হয় সেটিকে বোঝায়। যেমন ধরুন, আধুনিক হিসাব-বিজ্ঞান (Accounting) এর সুত্র হচ্ছে “জাবেদা” কিংবা “journal”. অংক কিংবা গনিতের সুত্র হচ্ছে (a+b)², e=mc², sin²-cos² কিংবা a²+b²=c² এই সুত্রগুলোর উপর ভিত্তি করেই মুলত গণিত পরিচালিত হয়। এমন আরও অনেক কিছুই রয়েছে, সেগুলো জানার আমাদের দরকার আপাতত নেই।


এগুলোকে বলা হয় স্বর্ণসূত্র। ফরেক্স ট্রেডিং স্ট্রেটিজির ক্ষেত্রেও এমন কিছু স্বর্ণসূত্র রয়েছে যেগুলোর উপর ভিত্তি করেই মুলত ট্রেডিং এর কৌশল নির্ধারিত কিংবা তৈরি হয়ে থাকে। এরকম একটি সুত্র হচ্ছে “সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স”


সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স নিয়ে ইতিমধ্যেই আপনাদের সাথে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। তাই আজকে আর এগুলোর পরিচিত দেয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু এতটুকু মনে রাখবেন,


সাপোর্ট হচ্ছে, প্রাইস যেই লেভেলটি ব্রেক করে নিচে নেমে আসতে পারেনা। রেসিস্টেন্স হচ্ছে, প্রাইস যেই লেভেলটি ব্রেক করে উপরে উঠে যেতে পারেনা।

ফরেক্স ট্রেডিং এর যেকোনো টেকনিক্যাল এনালাইসিস কিংবা কৌশল নিরূপণ হয় মুলত এই সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেলের উপর নির্ভর করে। সবথেকে সহজ এবং সাবলীল এই দুইটি বিষয় কিন্তু শতকরা ৯০ ভাগ ট্রেডারই, এগুলো ব্যবহার করে ট্রেড করেন না। ভিন্ন কিছু খুজেতে থাকেন এবং ফলাফল হয় লস, লস এবং লস।

আমাদের বিগত ৭ বছরের ট্রেডিং অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনি যদি শুধুমাত্র এই সাপোর্ট-রেসিস্টেন্স লেভেল ব্যবহার করে রিয়েল ট্রেডিং করতে পারেন, তাহলে লসের রেশিও অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।

নং ২ – ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন

ট্রেডিং এর জন্য আমরা যেই চার্ট ওপেন করে থাকি সেটির মধ্যে মুলত জাপানিজ ক্যান্ডেল বিদ্যমান থাকে যা প্রাইসের সাথে সাথে চার্টে মুভ করেতে থাকে। তাই এই ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন সম্পর্কে জানা এবং এগুলোকে কাজে লাগিয়ে যদি রিয়েল ট্রেডিং করতে পারেন তাহলে ভালো মানের এন্ট্রি চিহ্নিত করতে সক্ষম হবেন।


এই ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো, প্রাইসের গতিপথ নির্ণয়, সম্ভাব্য মুভমেন্টের ধরন, ট্রেন্ড এর শক্তি, ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারনা প্রদান করে। যা ব্যবহার করে আপনি নিজের জন্য এক্তি পারফেক্ট ট্রেডিং কৌশল সেট করে নিতে পারবেন।


ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলোকে যদি আপনি সাধারন সাপোর্ট-রেসিস্টেন্স এর সাথে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে মার্কেট ট্রেন্ড বুঝতে পারা, আপনার জন্য দুধ-ভাত মাত্র। একটি বিষয় সবসময়ই মনে রাখবেন,


মার্কেট ট্রেন্ড সঠিকরূপে বুঝতে পারলে কিংবা চিহ্নিত করতে পারলে, কখনওই ট্রেডে লস হবেনা।

এই প্যাটার্নগুলো কিভাবে কাজ করে, কোনও ধরনের প্যাটার্ন কি ধরনের সিগন্যাল দেয়, চার্টে চিহ্নিত করার নিয়ম, বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার করে ট্রেড করার মাধ্যম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন “Japanese Candlesticks” ট্রেনিং কোর্সটি থেকে। অনুগ্রহ করে অংশ নেয়ার অনুরধ থাকছে।



নং ৩ – মুভিং এভারেজ

ফরেক্স ট্রেডিং কৌশলগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশী জনপ্রিয় হচ্ছে এই মুভিং এভারেজ। মুভিং এভারেজ ব্যবহার করার মাধ্যমে ট্রেডাররা বুঝতে পারেন, মার্কেট ট্রেন্ড সম্পর্কে। আগেই বলছি, যদি সঠিকভাবে ট্রেন্ড চিহ্নিত করা জায়ম তাহলে লস হবার কোনও সম্ভাবনাই নেই।


মুভিং এভারেজ হচ্ছে মুলত, চার্টে পূর্বের ক্যান্ডেলগুলোর এভারেজ মান হিসাব করে একটি লাইন অংকন করে নেয়া যেটির হিসাব করে ট্রেডার ট্রেন্ড চিহ্নিত করতে পারেন। এটি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আমরা বিস্তর আলোচনা করেছি।


এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের মুভিং এভারেজ, এদের ক্যাল্কুলেশন প্রক্রিয়া, ট্রেডে এদের ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি জানতে পারবেন “Moving Average” ট্রেনিং কোর্সটি থেকে। কোর্সটিতে অংশ নিয়ে বিস্তারিত শিখে নেয়ার অনুরধ করছি।

নং ৩ – চার্ট প্যাটার্নTo top

চার্ট প্যাটার্নগুলো খুব ভালো রকমের সিগন্যাল প্রদান করে। তবে চার্টে এই প্যাটার্নগুলো খুঁজে বের করা কিছুটা কষ্টকর। তবে যদি সঠিক উপায়ে এই চার্ট প্যাটার্নগুলো খুঁজে বের করে নিতে পারেন এবং সেগুলো ব্যবহার করে এন্ট্রি গ্রহন করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত হয়ে বলছি, এর থেকে ভালো সিগন্যাল আর কেউই আপনাকে দিকে পারবে না।


চার্ট প্যাটার্নগুলো মুলত বিভিন্ন ধরনে বিভক্ত থাকে এবং প্রকারভেধে এদের সিগন্যাল প্রদানের মাধ্যমও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।


রিয়েল ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে চার্ট প্যাটার্ন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন, টাইমফ্রেম নির্বাচন করার বিষয়টি। সাধারণত, অপেক্ষাকৃত ছোট টাইমফ্রেমে এই প্যাটার্ন খুব ভালো কাজ করেনা। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে, যারা ছোট সময়ে ট্রেড করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই ফরেক্স ট্রেডিং স্ট্রেটিজিটি বিশেষ কাজ করবেনা।


বিভিন্ন ধরনের চার্ট প্যাটার্ন, এদের ব্যবহার, বৈশিষ্ট্য, চিহ্নিত করার মাধ্যম বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জনার জন্য অনুগ্রহ করে “Chart Patterns” ট্রেনিং কোর্সটিতে অংশ নিতে পারেন।

উপরের এই স্ট্রেটিজিগুলো ব্যবহার করে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে যদি ট্রেড করতে পারেন, তাহলে প্রফিট করার রেশিও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আমদের বিশ্বাস। মনে রাখবেন, যেকোনো স্ট্রেটিজি ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই সেটিকে প্র্যাকটিস কিংবা ডেমো ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয়ে নিতে হবে। নতুবা লস ব্যতীত কিছুই আর কপালে জুটবে না।