আমরা প্রত্যেকেই তো কোন না কোন ফরেক্স ব্রোকারের সাথে ট্রেড করি। এই ব্রোকারগুলোর আবার সম্পর্ক আছে বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে। বিশ্বের বড় বড় সব ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের সরাসরিই ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করার সুযোগ দেয়। তবে হ্যাঁ, চাইলেই আমি বা আপনি এই সুবিধা নিতে পারবো না। এর জন্য থাকতে হবে ডিপোজিট করার মত অনেক অনেক অর্থ। যেমন, আন্তর্জাতিক ব্যাংক Citi ব্যাংকের সাথে (বাংলাদেশের সিটি City Bank না) কারেন্সি ট্রেড করতে চাইলে, অ্যাকাউন্ট এ থাকতে হবে নুন্যতম দেড় লক্ষ পাউন্ড বা প্রায় ২ লক্ষ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় দেড় কোটি টাকারও বেশি। মাথায় হাত দিলেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফরেক্স মার্কেট তো আগে শুধু এলিটদের জন্যেই ছিল, একথা ভুলে গেলে কি চলবে? আরও মজার তথ্য হচ্ছে, প্রধান দশটি ব্যাংকের মাধ্যমেই ফরেক্স মার্কেটের প্রায় ৭৫% কারেন্সি এক্সচেঞ্জ হয়। এ ব্যাংকগুলো নিজেরাও গ্রাহকদের পাশাপাশি কারেন্সি ট্রেড করে থাকে এবং কোন কারেন্সি কিনলে মাঝে মাঝে এত বিশাল পরিমানে কিনে যে ওই কারেন্সি নিজেই এর ফলে শক্তিশালী বা দুর্বল হয়ে যায়। আর একারনেই আন্তর্জাতিক ফরেক্স মিডিয়ায় প্রতি ২০ টা নিউজ পড়লে অন্তত একটি রিপোর্ট পাবেন কোন না কোন ব্যাংক নিয়ে। যেমন, কোন ব্যাংক কোন কারেন্সি বাই/সেল করল, কোন ব্যাংকের অ্যানালাইসিস কি ইত্যাদি। ব্যাংকের নাম শুনলেই আপনার জানা উচিত, কোন ব্যাংক কত বড় আর ওই ব্যাংকের মার্কেটে প্রভাবই বা কেমন। তাহলে, কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেওয়া যাক, ফরেক্স মার্কেটের শীর্ষ প্রভাবশালী ব্যাংক কোনগুলো।
ইউরোমানি গত বছর যে ফরেক্স সার্ভে করেছে, সে অনুসারে ফরেক্স মার্কেটের শীর্ষ ১৫ টি ব্যাংক ও তাদের মার্কেট শেয়ার হলঃ
HSBC আর Standard Chartered তো আমাদের আগে থেকেই পরিচিত, মতিঝিলে যে Citi ব্যাংকের একটা অফিস আছে, তা অনেকেরই অজানা। আমি নিজেও প্রথমে Citi Bank কে আমাদের দেশের City Bank ভেবে ভুল করেছিলাম।
যাই হোক, চলুন এই ব্যাংকগুলো সম্পর্কে খুব অল্প করে কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জেনে নেইঃ
এই মুহূর্তে ফরেক্স মার্কেটে এই ব্যাংকের মার্কেট শেয়ারই সবচেয়ে বেশি, ১৬.১১%। নামে Citibank হলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাংকটিকে আদর করে Citi বলে ডাকা হয়। ব্যাংকটির স্লোগানও বেশ মজার, “Citi never sleeps”. ২০৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানে Citi Group এর মালিকানাধীন এই ব্যাংকটির হেড কোয়ার্টার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।
জার্মানরা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভালো, দামী দামী গাড়ি, মেশিন ইত্যাদি বানায়। তার বাইরেও যে কত বিখ্যাত জার্মান কোম্পানি আছে, তা অনেকেই জানে না। যেমন, জানে না যে, ফরেক্স মার্কেটের দ্বিতীয় প্রধান ব্যাংকটিও জার্মানদের। জার্মানরা সবকিছুতেই জার্মান ভাষা ব্যবহার করতে ভালোবাসে। তাই, ব্যাংকের নামও রেখেছে জার্মানে। তা নাহলে, ইংলিশে যদি “German Bank” বলা হত, তাহলে কি আর কারও বুঝতে সমস্যা হত? যাইহোক, গত বছর ৩৩ বিলিয়ন ইউরো রেভিনিউ করা ব্যাংকটির সদরদপ্তর জার্মানিরই ফ্রাংকফুর্টে। ফরেক্স মার্কেটের ১৪.৫৪% শেয়ার নিয়ে Citi র ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ব্যাংকটি।
Brexit এর ফলে ইউকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংকই লন্ডন থেকে অধিকাংশ কার্যক্রম কমিয়ে এনে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে বা ফ্রান্সের প্যারিসে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু, এরকম কিছু করার সুযোগ নেই Barclays এর। কারন, ব্যাংকটি স্বয়ং ইউকেরই আর এর সদরদপ্তর অবস্থিত লন্ডনে। ফরেক্স মার্কেটে শেয়ার ৮% হলেও নামের দিক দিয়ে ৩২৫ বছরের পুরনো এই ব্যাংকটি অনেক বিখ্যাত।
আমেরিকান ব্যাংক, সদরদপ্তর নিউইয়র্কে। কুখ্যাত জে.পি.মরগ্যানকে নিয়ে বিডিপিপসে একদিন লেখার প্লান আছে। গত বছর ব্যাংকটির মোট সম্পদের পরিমান ছিল ২.৩৫ ট্রিলিয়ন আর আয় ছিল ২৪.৪৪ বিলিয়ন।
সুইস বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থা, সদরদপ্তর যৌথভাবে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ও বাসেলে অবস্থিত। ফরেক্স মার্কেটে প্রতিস্থানটির শেয়ার ৭.৩০%
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি আমেরিকান ব্যাংক। কিন্তু, নামের শেষে Merrill Lynch কেন? আসলে Bank of America ২০০৯ সালে Merrill Lynch & Co কে কিনে নেয় আর ব্যাংকটির কর্পোরেট ও ইনভেস্টমেন্ট সেকশনের নামকরন করে “Bank of America Merrill Lynch”. ফরেক্স মার্কেটে ব্যাংকটির শেয়ার বর্তমানে ৬.২২%, আর সদরদপ্তর নিউইয়র্কে।
HSBC শব্দের অর্থ হচ্ছে The Hongkong and Shanghai Banking Corporation Limited। ১৮৬৫ সালে হংকং ও চীনের সাইহাইয়ে কে কেন্দ্র করে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন এর হেডকোয়ার্টার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। মাত্র ৫.৪০% মার্কেট শেয়ার নিয়ে ফরেক্স মার্কেটে সপ্তম অবস্থানে থাকলেও সম্পদের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ব্যাংক।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংকগুলোর একটি ফ্রেঞ্চ বহুজাতিক ব্যাংক BNP Paribas. ২০১২ সালে ফোর্বস ও ব্লুমবার্গের জরীপে মোট সম্পদের ভিত্তিতে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক।
এটিও নিউইয়র্ক ভিত্তিক বহুজাতিক আমেরিকান ব্যাংক। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটির ২০১৫ সালে আয় ছিল ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালে ব্যাংকটি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বন্ড ছাড়ার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে তার সম্মেলন কক্ষে গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিনিধি দলের একটি মীটিংও অনুষ্ঠিত হয়।
The Royal Bank of Scotland কে সংক্ষেপে RBS ডাকা হয়। ফরেক্স মার্কেট শেয়ার মাত্র ৩.৩৮% হলেও ব্যাংকটি কিন্তু অনেক পুরনো। সেই ১৭২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যাংকটি। ব্যাংকটির কার্যক্রম মূলত যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডকে ঘিরে। ব্যাংকটির সদরদপ্তর অবস্থিত স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে।
ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে। বিশ্বজুড়ে খুব বেশি পরিচিত না হলেও ফরেক্স মার্কেটে ব্যাংকটির ২.৪৩% মার্কেট শেয়ার রয়েছে।
এটি একটি ব্রিটিশ ব্যাংক, হেড কোয়ার্টারও লন্ডনে কিন্তু ব্রিটেনে কোন রিটেইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে না। মজার ব্যাপার হলো ব্যাংকটি ব্যবসা করে মূলত এশিয়া, আফ্রিকা ও মিডল ইস্টে। একারনেই বাংলাদেশে এত পরিচিত ব্যাংকটি। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির আয় ছিল ১৪.৬ বিলিয়ন ডলার।
আরেকটি নিউইয়র্কভিত্তিক আমেরিকান ব্যাংক। ফরেক্স মার্কেট শেয়ার Standard Charterd থেকে কম হলেও, ২০১৫ সালে ব্যাংকটির আয় ছিল ৩২.৪৯ বিলিয়ন যা SC থেকে দ্বিগুণেরও বেশি।
ইউরোপে বেশ জনপ্রিয় ব্যাংকটি। এর সদরদপ্তর অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। Credit Suisse প্রায়শই বিভিন্ন কারেন্সির টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। ফরেক্স মার্কেটে ব্যাংকটির শেয়ার মাত্র ১.৬৬%
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত এর সদরদপ্তর। এক সময়ে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করলেও এটি এখন আর কোন ব্যাংক নয়, বরং বিনিয়োগসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। ১৭৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত State Street, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীন ব্যাংক। ফরেক্স মার্কেটে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার ১.৫৫%